বিমানবন্দরে পাখি তাড়াতে আসছে ২১ শব্দ বন্দুক

শীত মৌসুম এলেই দেশের বিমানবন্দরগুলোর আশপাশের জলাশয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে আসে বাজসহ বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি। প্রকৃতি ও দর্শনার্থীদের জন্য এই অতিথিদের আগমন সুখকর হলেও উড়োজাহাজে যাতায়াতকারীদের জন্য তারা বড় ঝুঁকির কারণ। বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ মনে করছে, দেশের বিমানবন্দরগুলোয় পাখি তাড়ানোর কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় বার্ড হিটের (পাখির আঘাত) কারণে সামনে উড়োজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, উড়ন্ত পাখি উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য ঝুঁকি। বিমানবন্দরগুলোয় বর্তমানে প্রাকৃতিক উপায়ে পুরনো নিয়মে পাখি তাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। বার্ড হিটের কারণে বিমান চলাচলে ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে সমস্যা উত্তরণে অচিরেই জার্মানি থেকে অত্যাধুনিক ২১টি সাউন্ড বার্ড গান আনা হচ্ছে। এই শব্দ বন্দুক ব্যবহারে পাখি মরবে না, তবে বিকট আওয়াজের কারণে ভয়ে পালিয়ে যাবে। প্রাথমিকভাবে শাহজালাল বিমানবন্দরে এগুলো ব্যবহার করা হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিমানবন্দরেও এই গান বসানো হবে।

এয়ারলাইন্স সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমান চলাচল নির্বিঘœ করতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোয় আধুনিক ‘বার্ড শুটার’ ইউনিট রয়েছে। এই শুটাররা সপ্তাহে সাত দিন বিমানবন্দরের আকাশে নিয়মিত পাখি শিকার বা তাড়িয়ে উড়োজাহাজ চলাচল ঝুঁকিমুক্ত রাখেন। কিন্তু বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোয় বার্ড শুটার বা এর চেয়ে আধুনিক কোনো পদ্ধতি নেই। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চলছে মান্ধাতা আমলের ৬টি বন্দুক দিয়ে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এগুলো চালান সাতজন বার্ড শুটার। চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ অন্যান্য বিমানবন্দরের অবস্থা আরও খারাপ। ফলে পাখির আঘাতের কারণে প্রায়ই যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, গত ৫ বছরে দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে পাখি ঢোকা এবং সংঘর্ষের অন্তত ২০টি ঘটনা ঘটেছে। গত ২ নভেম্বর শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণের আগে ইঞ্জিনে পাখির আঘাতে ইউএস বাংলার এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী ফ্লাইট দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। পাইলট দক্ষতার সঙ্গে অবতরণ করালেও উড়োজাহাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকে বিমানবন্দরে বার্ড শুটার না থাকার বিষয়টি আলোচনায় আসে। তারও আগে গত ১৪ অক্টোবর উড্ডয়নের পর পাখির আঘাতের কারণে শাহজালাল বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণে বাধ্য হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ‘ময়ূরপঙ্খী’।

বিমানবন্দরে পাখি নিয়ন্ত্রণে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন ওয়াইল্ড লাইফ/বার্ড হ্যাজার্ড কন্ট্রোল কমিটি তৈরি করেছিল বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এ কমিটির চেয়ারম্যান ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, বিমানবাহিনীর ডিরেক্টর (অপারেশন), বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের ডিরেক্টর (অপারেশন), পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি, বিমানের এমডি, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার অপারেটর কমিটির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। সদস্য সচিব বেসামরিক বিমান পরিবহনের চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান। কমিটির দায়িত্ব ছিল ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) বিধিবিধান ও এয়ারপোর্ট সার্ভিস ম্যানুয়াল অনুযায়ী ওয়াইল্ড লাইফ ও বার্ড স্টাইক মোকাবিলা করা। একইসঙ্গে কোন ধরনের পাখি কোন মৌসুমে কেন আসে এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা, বিমানবন্দর ও এর আশপাশ এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নজরদারি, নিয়মিত বার্ড স্ট্রাইক নজরদারি, সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধান, বিমানবন্দরের পুকুরের মাছ, কৃষিজমি, গরু-ছাগলের খামার, ময়লা-আবর্জনার ডাম্পিং, গলফ কোর্স, ছোট পুকুর ইত্যাদি সরিয়ে ফেলার বিষয়েও তাদের কাজ করার কথা। তবে কমিটি তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারেনি আজও।

আপনি আরও পড়তে পারেন